Log in
Latest topics
Who is online?
In total there are 23 users online :: 0 Registered, 0 Hidden and 23 Guests None
Most users ever online was 45 on Fri Jan 08, 2021 4:00 am
Statistics
We have 61 registered usersThe newest registered user is SHAMIMSOUND
Our users have posted a total of 22 messages in 21 subjects
জঙ্গিরা এ দেশে কী চায়?
Page 1 of 1
জঙ্গিরা এ দেশে কী চায়?
বিশ্বের কোনো দেশেই ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তি, আল-কায়েদা বা তালেবানপন্থীরা রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। আফগানিস্তানে ছিল, এখন ক্ষমতাচ্যুত। চেষ্টা করছে আবার ক্ষমতা ফিরে পেতে। শুধু কি আফগানিস্তানেই তারা সীমিত? ক্ষমতাচ্যুত হিংস্র তালেবানরা একটা রাষ্ট্র দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাহলে তারা কি বাংলাদেশে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে? তারা হয়তো ভাবছে, এখানে গণতন্ত্র দুর্বল, তাই এখানেই সুযোগ। ব্যাপারটা গুরুতর। যাঁরা গণতন্ত্রের পতাকা বহন করছেন, তাঁদের ভেবে দেখতে হবে।
সম্প্রতি সন্দেহভাজন তিন জঙ্গি যুবক ধরা পড়ায় প্রশ্নটি সত্যিই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, তবে কি আফগানিস্তানের পর এবার বাংলাদেশ? আটকদের মধ্যে দুজন নাকি পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। তাঁদের যোগাযোগে দুই বিদেশি জঙ্গি নাকি কয়েক দিন আগে বারিধারায় আমেরিকান দূতাবাস এলাকা রেকি (হামলা চালানোর আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ) করে গেছেন। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে চট্টগ্রামে কথা বলেছেন। তারই সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামে চোরাচালানের ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণসহ সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় প্রশ্ন জাগে, আমাদের দেশে উগ্র ধর্মীয় চরমপন্থীরা কতটা শক্তি রাখে, তাদের হাতে কি গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে? এসব জঙ্গি তত্পরতা স্থিতিশীল রাজনীতির জন্য কতটা হুমকি তার একটা হিসাব করা দরকার। কারণ, গণতন্ত্র অতীতে অনেকবারই বিপন্ন হয়েছে। ধ্বংসের দোরগোড়ায় গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও তারপর ৩ নভেম্বর জেলহত্যা, ৭ নভেম্বর সিপাহি বিদ্রোহের নামে সামরিক কর্মকর্তা হত্যা, ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির উদ্ভব আমরা দেখেছি। আবার গণতন্ত্র উঠে দাঁড়িয়েছে, সেটাও দেখেছি। এ অবস্থায় আমরা কি বলব, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এত চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে, এত কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এখন সত্যিই ভঙ্গুর দশায়? যদি তা-ই হতো, তাহলে তো অনেক আগেই বাংলাদেশের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা যখন হয়নি, তাহলে হয়তো আমরা সাহস করে বলতে পারি, আমাদের গণতন্ত্র অত সহজে ধ্বংস হওয়ার নয়। এত ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও টিকে থাকতে পারাটা আমাদের গণতন্ত্রের শক্তির দিক, যা ভবিষ্যত্ সম্পর্কে আশাবাদী হওয়ার মতো একটি উপাদান।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট রাজনীতি-বিজ্ঞানী, সমাজ বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুকাল ধরে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। লেখালেখি করছেন। নিউইয়র্ক টাইমস (২৩ জানুয়ারি, ২০০৫) পত্রিকায় নিউইয়র্ক-ভিত্তিক লেখক এলিজা গ্লিজওয়াল্ড ‘দি নেক্সট ইসলামিস্ট রেভ্যুলুশন?’ (পরবর্তী ইসলামি বিপ্লব?) নামে একটি নিবন্ধে মূলত দেখান যে বাংলাদেশ যেন ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের পরিণতি বরণ করতে চলেছে। তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে বাংলাদেশ আল-কায়েদার মুঠোয় চলে যাওয়ার বাস্তব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সে সময় রাজশাহীর বাগমারায় বাংলা ভাই (সিদ্দিকুর রহমান) ও শায়েখ আবদুর রহমানের দল জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) যে সহিংস তত্পরতা চালাচ্ছিল, তারই পটভূমিতে গ্লিজওয়াল্ড ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞ হিরণ্ময় কারলেকারও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখেন, ‘বাংলাদেশ: দি নিউ আফগানিস্তান?’। সে সময় সারা দেশে একযোগে ৫০০ বোমা বিস্ফোরণে সবাই হতভম্ব। মনে হয়েছিল, আল-কায়েদা গোষ্ঠী বুঝি এসেই গেল। ওই পটভূমিতে বাংলাদেশের মানুষের উদার ধর্মীয় মনোভাবের (মডারেট মুসলিম) প্রতি আস্থাশীল হয়েও কারলেকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পরিণতি সম্পর্কে শঙ্কামুক্ত হতে পারেননি। সেই উদ্বেগের প্রকাশ ঘটেছে তাঁর বইয়ে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত। তিনিও লেখেন, ‘বাংলাদেশ: এ ফ্র্যাজাইল ডেমোক্রেসি’ (বাংলাদেশে ভঙ্গুর গণতন্ত্র)। একানব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দুই নেত্রীর মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত ও পাল্টাপাল্টি এবং তার পটভূমিতে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যদিকে ইসলামি চরমপন্থী শক্তির উদ্ভবের বিপদ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন।
এভাবে দেখা যায়, বিগত চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু তার পর দেখা গেল পরিস্থিতি তত খারাপ না, যতটা অন্যরা বাইরে থেকে মনে করেছেন। বিশেষত, বাংলা ভাই ও শায়খ রহমানসহ জঙ্গি তত্পরতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এটা অন্তত বলা যায়, এখানে জঙ্গিদের চেয়ে গণতন্ত্রের শক্তি এখনো বেশি। আত্মতৃপ্তির জন্য নয়, পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভের জন্যই এটা বলা দরকার।
কিন্তু এর পরও বলতে হয় যে বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসেছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইংল্যান্ড-আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের বেসামরিক ও কর্নেল-ব্রিগেডিয়ার পদবির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। গত ৩ অক্টোবর তাঁদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের একটি সৌজন্য সাক্ষাত্ অনুষ্ঠানে আমি যাই। নানা কথার মধ্যে প্রতিনিধি দলের সদস্য একজন সেনাকর্মকর্তা জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রের ব্যাপারে আমরা কতটা উদ্বিগ্ন? বলার অপেক্ষা রাখে না, বাইরে যে ধরনের আলোচনা রয়েছে, তার ভিত্তিতেই তিনি ওই প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সুষ্ঠু নির্বাচনের পর হয়তো এ প্রশ্নটি ওভাবে আসত না, যদি ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় রক্তক্ষয়ী ঘটনা না ঘটত। এই হলো আমাদের গণতন্ত্রের সমস্যা। এখানে যেমন আছে সংসদ, তেমন আছে বর্জন। যেমন আছে ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করার গৌরব, তেমনি আবার আছে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি সম্ভবত একটা ৫০: ৫০ হ্যাঁ-না মনোভাব নিয়ে গেছেন।
এটা ঠিক যে ২০০৬ সালের অক্টোবরে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পটভূমিতে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, সেটা গণতন্ত্রের আকাশে কালো মেঘ রূপেই আবির্ভূত হয়। কারণ, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে কি না সে প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সরাসরি সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা মূর্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বিপদও পার হয়েছে বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে এক-এগারোর তিন উদ্যোক্তার একজন লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর একটি সাক্ষাত্কার গত তিন অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। এটি নেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনলাইন পত্রিকা এন ওয়াই এবং কানাডা থেকে প্রকাশিত নতুন দেশে প্রচারিত সাক্ষাত্কার থেকে। সেখানে তিনি বলেন, ‘মার্শাল ল জারি করে দেশ শাসনের ইচ্ছার সাথে আমি কখনো একমত ছিলাম না। তা ছাড়া দেশে তো আমরা সামরিক শাসন জারি করিনি।’ সাক্ষাত্কারে আরও অনেক চমকপ্রদ কথা ছিল, কিন্তু পরে জেনারেল মাসুদ সাক্ষাত্কারের কথা অস্বীকার করেছেন বলে একটি পত্রিকায় জানানো হয়। যা হোক, আমরা একটি ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারি যে, ক্ষমতা দখলের কোনো বাস্তব উদ্যোগ তাঁদের ছিল না; বা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় সেদিকে তাঁরা যাননি। আর সেটা যদি না হয়, তাহলে তো আমরা বলতে পারি, আমাদের গণতন্ত্র বেশ মজবুত, ভঙ্গুরের প্রশ্ন ওঠে না। আসলে গণতন্ত্রের পরীক্ষা হয় নির্বাচনে। গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যে ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে তাতে বোঝা যায়, আমাদের গণতন্ত্র ভাঙে তবু মচকায় না।
এখন সরকারি ও বিরোধী দলের কর্তব্য হবে, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের সমর্থন আরও শক্তিশালী করা। মানুষের পাশে থাকা। তাহলে জঙ্গিবাদীরা দূরে সরে যেতে বাধ্য হবে।
আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
সম্প্রতি সন্দেহভাজন তিন জঙ্গি যুবক ধরা পড়ায় প্রশ্নটি সত্যিই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ বলছেন, তবে কি আফগানিস্তানের পর এবার বাংলাদেশ? আটকদের মধ্যে দুজন নাকি পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। তাঁদের যোগাযোগে দুই বিদেশি জঙ্গি নাকি কয়েক দিন আগে বারিধারায় আমেরিকান দূতাবাস এলাকা রেকি (হামলা চালানোর আগে পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ) করে গেছেন। সেখান থেকে মোবাইল ফোনে চট্টগ্রামে কথা বলেছেন। তারই সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রামে চোরাচালানের ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণসহ সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় প্রশ্ন জাগে, আমাদের দেশে উগ্র ধর্মীয় চরমপন্থীরা কতটা শক্তি রাখে, তাদের হাতে কি গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে? এসব জঙ্গি তত্পরতা স্থিতিশীল রাজনীতির জন্য কতটা হুমকি তার একটা হিসাব করা দরকার। কারণ, গণতন্ত্র অতীতে অনেকবারই বিপন্ন হয়েছে। ধ্বংসের দোরগোড়ায় গিয়ে আবার ফিরে এসেছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও তারপর ৩ নভেম্বর জেলহত্যা, ৭ নভেম্বর সিপাহি বিদ্রোহের নামে সামরিক কর্মকর্তা হত্যা, ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির উদ্ভব আমরা দেখেছি। আবার গণতন্ত্র উঠে দাঁড়িয়েছে, সেটাও দেখেছি। এ অবস্থায় আমরা কি বলব, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এত চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে, এত কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এখন সত্যিই ভঙ্গুর দশায়? যদি তা-ই হতো, তাহলে তো অনেক আগেই বাংলাদেশের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা যখন হয়নি, তাহলে হয়তো আমরা সাহস করে বলতে পারি, আমাদের গণতন্ত্র অত সহজে ধ্বংস হওয়ার নয়। এত ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও টিকে থাকতে পারাটা আমাদের গণতন্ত্রের শক্তির দিক, যা ভবিষ্যত্ সম্পর্কে আশাবাদী হওয়ার মতো একটি উপাদান।
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট রাজনীতি-বিজ্ঞানী, সমাজ বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছুকাল ধরে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। লেখালেখি করছেন। নিউইয়র্ক টাইমস (২৩ জানুয়ারি, ২০০৫) পত্রিকায় নিউইয়র্ক-ভিত্তিক লেখক এলিজা গ্লিজওয়াল্ড ‘দি নেক্সট ইসলামিস্ট রেভ্যুলুশন?’ (পরবর্তী ইসলামি বিপ্লব?) নামে একটি নিবন্ধে মূলত দেখান যে বাংলাদেশ যেন ধীরে ধীরে আফগানিস্তানের পরিণতি বরণ করতে চলেছে। তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে বাংলাদেশ আল-কায়েদার মুঠোয় চলে যাওয়ার বাস্তব ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সে সময় রাজশাহীর বাগমারায় বাংলা ভাই (সিদ্দিকুর রহমান) ও শায়েখ আবদুর রহমানের দল জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) যে সহিংস তত্পরতা চালাচ্ছিল, তারই পটভূমিতে গ্লিজওয়াল্ড ওই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞ হিরণ্ময় কারলেকারও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে লেখেন, ‘বাংলাদেশ: দি নিউ আফগানিস্তান?’। সে সময় সারা দেশে একযোগে ৫০০ বোমা বিস্ফোরণে সবাই হতভম্ব। মনে হয়েছিল, আল-কায়েদা গোষ্ঠী বুঝি এসেই গেল। ওই পটভূমিতে বাংলাদেশের মানুষের উদার ধর্মীয় মনোভাবের (মডারেট মুসলিম) প্রতি আস্থাশীল হয়েও কারলেকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পরিণতি সম্পর্কে শঙ্কামুক্ত হতে পারেননি। সেই উদ্বেগের প্রকাশ ঘটেছে তাঁর বইয়ে। বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ শ্রীরাধা দত্ত। তিনিও লেখেন, ‘বাংলাদেশ: এ ফ্র্যাজাইল ডেমোক্রেসি’ (বাংলাদেশে ভঙ্গুর গণতন্ত্র)। একানব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর দুই নেত্রীর মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত ও পাল্টাপাল্টি এবং তার পটভূমিতে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যদিকে ইসলামি চরমপন্থী শক্তির উদ্ভবের বিপদ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন।
এভাবে দেখা যায়, বিগত চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু তার পর দেখা গেল পরিস্থিতি তত খারাপ না, যতটা অন্যরা বাইরে থেকে মনে করেছেন। বিশেষত, বাংলা ভাই ও শায়খ রহমানসহ জঙ্গি তত্পরতায় লিপ্ত ব্যক্তিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এটা অন্তত বলা যায়, এখানে জঙ্গিদের চেয়ে গণতন্ত্রের শক্তি এখনো বেশি। আত্মতৃপ্তির জন্য নয়, পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তব ধারণা লাভের জন্যই এটা বলা দরকার।
কিন্তু এর পরও বলতে হয় যে বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসেছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইংল্যান্ড-আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশের বেসামরিক ও কর্নেল-ব্রিগেডিয়ার পদবির উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। গত ৩ অক্টোবর তাঁদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের একটি সৌজন্য সাক্ষাত্ অনুষ্ঠানে আমি যাই। নানা কথার মধ্যে প্রতিনিধি দলের সদস্য একজন সেনাকর্মকর্তা জিজ্ঞেস করেন, বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রের ব্যাপারে আমরা কতটা উদ্বিগ্ন? বলার অপেক্ষা রাখে না, বাইরে যে ধরনের আলোচনা রয়েছে, তার ভিত্তিতেই তিনি ওই প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সুষ্ঠু নির্বাচনের পর হয়তো এ প্রশ্নটি ওভাবে আসত না, যদি ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় রক্তক্ষয়ী ঘটনা না ঘটত। এই হলো আমাদের গণতন্ত্রের সমস্যা। এখানে যেমন আছে সংসদ, তেমন আছে বর্জন। যেমন আছে ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করার গৌরব, তেমনি আবার আছে ভ্রাতৃঘাতী হানাহানি। আমি তাঁকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি সম্ভবত একটা ৫০: ৫০ হ্যাঁ-না মনোভাব নিয়ে গেছেন।
এটা ঠিক যে ২০০৬ সালের অক্টোবরে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পটভূমিতে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, সেটা গণতন্ত্রের আকাশে কালো মেঘ রূপেই আবির্ভূত হয়। কারণ, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে কি না সে প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সরাসরি সেনা হস্তক্ষেপের আশঙ্কা মূর্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বিপদও পার হয়েছে বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে এক-এগারোর তিন উদ্যোক্তার একজন লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর একটি সাক্ষাত্কার গত তিন অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়। এটি নেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনলাইন পত্রিকা এন ওয়াই এবং কানাডা থেকে প্রকাশিত নতুন দেশে প্রচারিত সাক্ষাত্কার থেকে। সেখানে তিনি বলেন, ‘মার্শাল ল জারি করে দেশ শাসনের ইচ্ছার সাথে আমি কখনো একমত ছিলাম না। তা ছাড়া দেশে তো আমরা সামরিক শাসন জারি করিনি।’ সাক্ষাত্কারে আরও অনেক চমকপ্রদ কথা ছিল, কিন্তু পরে জেনারেল মাসুদ সাক্ষাত্কারের কথা অস্বীকার করেছেন বলে একটি পত্রিকায় জানানো হয়। যা হোক, আমরা একটি ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারি যে, ক্ষমতা দখলের কোনো বাস্তব উদ্যোগ তাঁদের ছিল না; বা থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় সেদিকে তাঁরা যাননি। আর সেটা যদি না হয়, তাহলে তো আমরা বলতে পারি, আমাদের গণতন্ত্র বেশ মজবুত, ভঙ্গুরের প্রশ্ন ওঠে না। আসলে গণতন্ত্রের পরীক্ষা হয় নির্বাচনে। গত ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে যে ৮৭ দশমিক ১৬ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়েছে তাতে বোঝা যায়, আমাদের গণতন্ত্র ভাঙে তবু মচকায় না।
এখন সরকারি ও বিরোধী দলের কর্তব্য হবে, গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের সমর্থন আরও শক্তিশালী করা। মানুষের পাশে থাকা। তাহলে জঙ্গিবাদীরা দূরে সরে যেতে বাধ্য হবে।
আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
Page 1 of 1
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
Fri Mar 05, 2010 7:20 pm by gurubhai
» ইমেইল এ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা
Tue Jan 26, 2010 7:50 pm by Admin
» ল্যাপটপের সাধারণ যত্নআত্তি:
Tue Jan 26, 2010 7:46 pm by Admin
» স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরনারীদের অবদান
Tue Jan 26, 2010 7:11 pm by Admin
» স্মৃতি: ষোলই-ডিসেম্বর ঊনিশ শ’ একাত্তর:
Tue Jan 26, 2010 7:09 pm by Admin
» জঙ্গিরা এ দেশে কী চায়?
Tue Jan 26, 2010 7:03 pm by Admin
» ১৯৭৭ সালের টাকা
Tue Jan 26, 2010 6:53 pm by Admin
» ১৯৭৪ সালের টাকা
Tue Jan 26, 2010 6:51 pm by Admin
» ১৯৭৩ সালের টাকা
Tue Jan 26, 2010 6:49 pm by Admin